পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক হাতিয়ার

 একটা বিশাল বড় মাপের শক্তিশালী বিস্ফোরণ হয়।
এবং সেই বিস্ফোরণের সাথে সাথেই প্রচুর আগুনের গোলা, আলো এবং ধোঁয়ার পুঞ্জিভূত মেঘ তৈরি হয়।

এবং যে বা যারা সেই ধোঁয়ার কাছাকাছি আসে তারাও মুহুর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়।

এই ধ্বংসলীলার ছবি Cobalt bomb এর বিস্ফোরণ এর।

যখনই কোন কোবাল্ট বোমা বিস্ফোরণ হয় তখন সমগ্র জনজীবন এ ত্রাহি ত্রাহি শুরু হয়ে যায়।

মুহুর্তের মধ্যে বড় বড় বাড়ি এবং বিল্ডিং ধুলোয় মিশে যায়।

চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ, হাহাকার চিৎকার আর রক্তে ভর্তি হয়ে যায় চারিদিক।

আর ভাগ্যক্রমে যারা এই বিস্ফোরণের হাত থেকে বেঁচে যায় তারা অন্যান্য রোগের কবলে পড়ে মারা যায়।
যে রোগ গুলো হবার কারনও এই বিস্ফোরণ।

১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাচ্চারা এই বিস্ফোরণের থেকে তৈরি হওয়া রেডিয়েশনের কারণে মায়ের গর্ভ থেকেই পঙ্গু হয়ে জন্মাতে থাকে।

এই রেডিয়েশনের প্রভাব আরো বেশ কয়েক বছর বিস্ফোরণস্থল গুলোতে থেকে যায়।

আজ বলবো এই কোবাল্ট বোমা কিভাবে জনজীবন কে প্রভাবিত করতে পারে এবং আগামী প্রজন্মকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে পারে।

১৯৪৫ সালে সর্বপ্রথম নিউক্লিয়ার হামলা হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে করা হয়।

এই নিউক্লিয়ার বোমা তৈরি করতে অনেক বৈজ্ঞানিক হাত লাগান যার মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন লিও সিজলার্ড (Leo Szilard)

যদিও এই হামলার পরেও লিও সিজলার্ড তার গবেষণা চালু রাখেন।

কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন পরমাণু হামলায় ব্যবহার হওয়া কোবাল্ট বোমা কে এতো বেশি শক্তিশালী করা সম্ভব যা দ্বারা পৃথিবী থেকে সমগ্র মানবজাতি কে Extinct অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব।


একটা কোবাল্ট বোমার ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই যা বলতে হয় তা হল

একটি কোবাল্ট বোমার মধ্যে কোবাল্ট -৫৯ মেশানো থাকে।
এটি একটি এমন পদার্থ যা পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে স্থির আইসোটোপ অর্থাৎ এতে প্রোটন এর মাত্রা সমান সমান থাকে কিন্তু নিউট্রন আলাদা আলাদা লেভেলে থাকে।

এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো কোবাল্ট -৫৯ মিশে থাকার কারণে কোনো পরমাণু বোমা ই ধ্বংসাত্মক হয় না, এগুলো ধ্বংসাত্মক হয় তাদের রেডিয়েশনের কারণে যা বিস্ফোরণের উৎসস্থল থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূর ছড়িয়ে যেতে পারে যা একটি বড় জায়গা বা এলাকা কে তার রেডিয়েশন এর মাধ্যমে Contaminant অর্থাৎ দূষিত করে দেয় যে কারণে সমস্ত এলাকা জুড়ে ঝড়ের গতিতে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে।


"Dirty bomb" এর কথা শুনেছেন অনেকেই আশা করি।

এগুলো হলো সেই সব বোমা যা প্রচন্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণের সাথে সাথে রেডিয়েশন দ্বারা কয়েকশ কিলোমিটার দূর অব্দি হাজার হাজার মানুষকে সংক্রমিত করে দেয় ।

আর কোবাল্ট বোমা কে বলা হয় "Super dirty bomb"


যখন কোনো কোবাল্ট বোমা কে মাটিতে ফেলা হয় তখন সেটা কেবলমাত্র একটা Shell বা "খোল" অবস্থায় থাকে।

কিন্তু মাটিতে পড়ার পর যখন তাকে Detonated করা হয় তখনই তার মধ্যে প্রচণ্ড শক্তি এবং তাপ তৈরি হতে শুরু করে।

এই প্রক্রিয়ার ঠিক তেমনি যেমন ব্রম্ভান্ডের সূর্য এবং বাকি গ্রহ-নক্ষত্রের সাথে হয়।

একটা থার্মো নিউক্লিয়ার হাতিয়ার অন্যান্য Conventional
বোমার তুলনা কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী।



কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তি এবং তাপ উৎপন্ন করতে পারে বিস্ফোরণের সাথে সাথে।

একটা নিউক্লিয়ার হাতিয়ারে পার্টস অনেক কম থাকে।

এই ধরনের একটি হাতিয়ার হল Tsar Bomba যে বিষয়ে বিস্তারিত আগে বলেছি।

এই বোমা কে প্রথমে ১০০ মেগাটনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
কিন্তু কিছু কারণে পরে সেই ওজন কমিয়ে ৫৮ মেগাটন করে দেওয়া হয়।

আর একটা ১০০ মেগাটনের পরমাণু বোমা হাতের তুড়ি তে যে কোন বড় শহরকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে।
শুধু তাই নয় শহর টা যে দেশে অবস্থিত সেই দেশের সব কিছুকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং সেই দেশের আবহাওয়া কে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে,Contaminant করে দিতে পারে।

যখন কোন কোবাল্ট বোমা বিস্ফোরণ হয় তখন সেই বিস্ফোরণ থেকে উৎপন্ন Fusion reaction তৈরি হয় যা  
Cobalt-59 কে রেডিও অ্যাক্টিভ cobalt- 60 তে বদলে দেয় যে কারণে সেই বোমা Vaporize হয়ে যায় এবং বিস্ফোরণের পরে  মাটিতে তার ডাস্ট পার্টিক্যাল ছড়িয়ে পড়ে যে কারণে খুব তাড়াতাড়ি চারিদিকে সংক্রমণ ছড়াতে থাকে।

cobalt- 60 জীবনকাল ৫ বছর।
আর এই পাঁচ বছর চারিদিকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পক্ষে যথেষ্ট।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে পাঁচ বছর পর তার প্রভাব শেষ হয়ে যাবে।


বরং এর রেডিয়েশনের সংক্রমণ কয়েকশ বছর কিংবা তার বেশীও থেকে যায়।

বলা হয় একটা কোবাল্ট বোমা বিস্ফোরণের সময় যেখানে বিস্ফোরণ হচ্ছে সেখানে যদি খুব জোরে হাওয়া দেয় তাহলে সেই রেডিয়েশন আরো বেশি দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

এই বিষয়ে আমেরিকান স্কলার 
Stephen Sowards এর বক্তব্য হলো..…
জোরে হওয়ার সাথে কোবাল্ট বোমার বিস্ফোরণ অনেক বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে, এবং সেটা এতটাই বেশি যে, যদি এই বোমা সেই সময় ওয়াশিংটন এর ফাটে তাহলে তার রেডিয়েশনের প্রভাব মেক্সিকো এবং কানাডা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

আবার অন্যদিকে এ বিষয়ে Federation of American scientist এর বক্তব্য হলো

একটা কোবাল্ট বোমার বিস্ফোরণের ফলাফল আরো বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে যদি তাতে মাত্র ৯ গ্রাম Cobalt -60 মিলিয়ে দেওয়া যায়।

একটা কোবাল্ট বোমা ওই ৯ গ্রামের পরিবর্তে সাড়ে চার কিলোগ্রাম শক্তি উৎপন্ন করবে
এবং আরো বেশী ঘাতক হয়ে যাবে।

আবার যদি 60 কিলোগ্রামের একটা কোবাল্ট বোমা কে মাটিতে Detonate করা হয় তাহলে 10SV/H স্পিডে তার রেডিয়েশন ছড়াতে থাকবে এবং খুব তাড়াতাড়ি তা ১০০ কিলোমিটার পেরিয়ে যাবে।

যেকোন সুস্থ সবল ব্যক্তি যে এই রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসবে সে এই রেডিয়েশন থেকে প্রভাবিত হয়ে যাবে এবং মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তার মৃত্যু হয়ে যাবে।

শুধু তাই নয়....


এই রেডিয়েশনের প্রভাব এ সেই অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি  কৃষিক্ষেত্র এবং জনবসতি এক থেকে দু মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

আর ভাগ্যক্রমে যারা বেঁচে যাবে তারা ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়ে মারা যাবে।

যদিও সময়ের সাথে সাথে এই বোমার রেডিয়েশনের প্রভাব কমতে থাকে এবং ৫ বছর পর এর রেডিয়েশন 5SV/H স্পিডে ছড়াতে থাকবে।

কিন্তু এই গতিও মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী ক্যান্সার তৈরি করার জন্য যথেষ্ট।

যদি কোথাও কখনো এমন কোন বিস্ফোরণ হয় তাহলে সেই বিস্ফোরণের ৫৩ বছর পরেও তার রেডিয়েশন 10mlSV/H স্পিড এ ছড়াতে থাকবে।

এই অবস্থায় সেই সংক্রমিত এলাকায় কোনো সুস্থ সবল ব্যক্তি মাত্র এক থেকে চার দিন ই সুস্থ থাকতে পারে।

কিন্তু চারদিন পর সেও সংক্রমিত হয়ে যাবে এবং এই সংক্রমণ থেকে হওয়া প্রভাব তার শরীরের ওপর দেখা যাবে।

এমনকি ১০০ বছর পরেও এই রেডিয়েশন ওই এলাকায় 1micron SV/H গতিতে ছড়াতে থাকবে।

কিন্তু তখন এই স্টেজ বা গতি মানুষের জন্য নিরাপদ।

বিনা কোন প্রটেকশন ছাড়া সেই এলাকায় তখন যে কেউ থাকতে পারে।

তবুও দেখতে গেলে কিছুটা হলেও রেডিয়েশনের প্রভাব তখনও সেই এলাকায় থাকে যে কারণে তখনও সেই এলাকা থেকে বেশকিছু ক্যান্সার রোগী পাওয়া যাবে।

এবং প্রায় ১৩০ বছর পর এর রেডিয়েশনের মাত্রা বিপদসীমার থেকে নিচে নেমে যায এবং এরপরেই সেখানকার মানুষ সুস্থ সবল ভাবে সেখানে থাকতে পারবে।

Leo Szilard এর মতে এই বোমা পৃথিবী থেকে মানবজাতিকে শেষ করে দেবার পক্ষে যথেষ্ট কিন্তু এমন নয় যে এই বিস্ফোরণের ফলে সবাই মারা যাবে।
কিছু মানুষ এতকিছুর পরেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাবে।

আর যারা বেঁচে যাবে তারা অন্য কোনো দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে ধীরে ধীরে এই পৃথিবী থেকে জীবনের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে।



Comments

Popular posts from this blog

অস্থি বিসর্জন কি এবং কেন

রোগ হরণী মা শীতলা

পবিত্র শালগ্রাম শিলা নিয়ে কিছু কথা