রেলকর্মীদের প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধে নিয়ে কিছু কথা
রেল কর্মীদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আজ বলার কথা ছিল।
এক্ষেত্রে সবার প্রথমেই সেই সমস্ত স্টাফেদের কথা বলতে হবে যাদের কে Continuous ক্যাটেগরি তে রাখা হয়।
যেমন, ক্লার্ক, স্টেশন মাস্টার, গুডস গার্ড, ড্রাইভার ,টিসি, টিটি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই সমস্ত পোস্ট এ কর্মরত স্টাফেদের ডিউটি প্রতিদিন আট ঘন্টা করে হয় এবং সপ্তম দিন ২৪ ঘন্টার রেস্ট দেওয়া হয়।
এরপরেই আসে সেই সমস্ত স্টাফেরা যাদের ডিউটি ১২ ঘণ্টার।
এবং তারপর তাদের সপ্তাহে দুদিন বিশ্রাম দেওয়া হয়।
এই ধরনের স্টাফেদের Essential entermittant staff বলা হয়।
যেমন, গেটকিপার, চৌকিদার, এবং এই রকম আরো অনেক কিছু।
এরপর আছে এমন কিছু স্টাফ যাদের কে Intensive গ্রুপে রাখা হয়।
এদের ডিউটি ৬ ঘন্টার।
এই ছয় ঘন্টা তাদের কে ভীষণ সতর্কভাবে নিজের ডিউটি পালন করতে হয়।
কেননা এরা ট্রেন পরিচালন এবং নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন।
এদের ক্ষেত্রে ও সাপ্তাহিক বিশ্রাম প্রযোজ্য।
যেমন, ট্রাফিক কন্ট্রোলার, কোচিং কন্ট্রোলার ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর পরে আসে Excluded ক্যাটেগরি ভুক্ত স্টাফ।
এদের Rest schedule নির্দিষ্ট নয়।
আর না তো ঘন্টার হিসেবে এদের ডিউটি দেওয়া হয়।
এদের ওপর ২৪ ঘন্টা ডিউটির দায়িত্ব থাকে।
যখনই রেলের দরকার পড়বে তখনই এদের কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজের ডিউটি পালন করতে হয় সেটা যে সময় ই হোক।
যেমন Accident site, Breakdown site ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর এই ধরনের ডিউটির ক্ষেত্রে রেলের সমস্ত বিভাগ থেকে স্টাফদের Nominate করা হয়।
এগুলো ছাড়া আর কি কি সুবিধা পাওয়া যায় এবার সেই বিষয়ে বলি।
১) সমস্ত রেলকর্মীর প্রত্যেক বছরের জুলাই মাসে ৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয়।
২) বছরে দুবার অর্থাৎ জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয়।
৩) প্রতি দশ বছর পর বেতন কমিশন গঠন করা হয় যে কমিশন কর্মচারীদের বেতন সম্বন্ধীয় সমস্ত কিছু আলোচনা এবং নিরীক্ষণ এর মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধি করে।
৪) রাত্রিতে ডিউটি করতে যাওয়া সমস্ত স্টাফেদের আলাদাভাবে Night duty allowance দেওয়া হয়।
৫) এই নাইট ডিউটি চলাকালীন যদি কোন স্টাফ নিজের কর্মস্থল থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ডিউটি করতে যায় তাহলে তাকে Travel allowance দেওয়া হয়।
৬) যদি কোন ট্রেন কখনো দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় তাহলে দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করা সমস্ত স্টাফ তথা রেল আধিকারিক কে Travel allowance এর সাথে সাথে Diet allowance দেওয়া হয়।
অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়ার খরচ।
৭) নিজের চাকরি থাকা অবস্থায় যদি কোন রেল কর্মচারী মারা যায় তাহলে তার কোন এক সন্তান বা আশ্রিত কে চাকরি দেওয়া হয় এবং সেই কর্মচারীর স্ত্রী কে পেনশন দেওয়া হয়।
৮) যদি স্ত্রী ও মারা যায় তাহলে অবিবাহিত মেয়ে অথবা বিধবা মেয়ে কেও পেনশন দেওয়া হয়।
৯) যে সমস্ত স্টাফেদের সার্ভিস পিরিওড পাঁচ বছর পূরণ হয়নি তাদের কে বছরে একটি ফ্রি পাস এবং চারটি PTO পাস দেওয়া হয় যেখানে তাদের কে এক-তৃতীয়াংশ ভাড়া দিতে হয়।
১০) যে সমস্ত স্টাফেদের সার্ভিস পিরিওড পাঁচ বছর পূরণ হয়ে যায় তাদের কে বছরে তিনটি ফ্রি পাস এবং চারটি PTO পাস দেওয়া হয়।
১১ রেল কর্মচারীদের ছেলে মেয়ে যদি আলাদাভাবে অন্য কোথাও পড়াশোনা করে তাহলে তাদের জন্য এডুকেশনাল পাস দেওয়া হয়।
যদি হোস্টেলে পড়াশোনা করে তাহলে প্রথম দুই সন্তান পিছু
এই সুবিধা সমস্ত রেলকর্মীর জন্য প্রযোজ্য
১২) চিকিৎসার জন্য রেলের আলাদা হেলথ ইউনিট এবং হাসপাতাল রয়েছে।
যেখানে সমস্ত রেল কর্মচারী কিংবা তার কোন আশ্রিত কে বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হয়।
১৩) নিজের ডিউটি চলাকালীন যদি কোন রেল কর্মচারী দুর্ঘটনায় কোন ভাবে আহত হয় তাহলে তাকে কাজ না করেই বাড়িতে বসে তিন মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেতন দেওয়া হয় এবং তার সাথে সাথে তাকে সম্পূর্ণ ফ্রী ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।
১৪) দুর্ঘটনা থেকে সুস্থ হতে যদি তিন মাসের বেশি সময় লেগে যায় তাহলে সেই কর্মচারীর প্রাপ্ত ছুটি থেকে ছুটি কাটতে থাকে কিন্তু কোনোভাবেই বেতন কাটা যায় না ।
সম্পূর্ণ বেতন ই তাকে দেওয়া হয়।
এবার আসি রেল কর্মচারীদের প্রাপ্ত ছুটি সম্পর্কে।
১)সমস্ত রেল কর্মচারী কে ১০ দিনের আকস্মিক ছুটি দেওয়া হয়।
যে ছুটি গুলো না নিলে একটা সময় পর বাতিল হয়ে যায়।
এছাড়াও বছরে অতিরিক্ত আরো ৩০ টি ছুটি দেওয়া হয়।
যে ছুটি গুলো না নিলে জমা থাকবে।
২)এছাড়াও প্রত্যেক রেল কর্মচারী কে বছরে দশ দিনের Sick leave ছুটি দেওয়া হয়।
এই ছুটি গুলোও আগের ছুটির মতই যা না নিলে জমা থাকে।
৩) প্রত্যেক মহিলা রেল কর্মচারী কে প্রথম দুই সন্তান জন্মের সময় ১৮০×২ = ৩৬০ দিনের মাতৃকালীন ছুটি দেওয়া হয়।
এবং সমস্ত পুরুষ রেল কর্মচারী কে ১৫ দিনের পিতৃ কালীন ছুটি দেওয়া হয়।
৪)এছাড়াও যে সমস্ত রেলকর্মচারী গ্রুপ ডি তে কর্মরত যারা কিনা কোন প্রমোশন পাননি বা প্রমোশন হয়নি তারা নিজেদের সার্ভিস পিরিয়ড শেষ হওয়ার ৫ বছর আগে ঐচ্ছিক অবসর নিতে পারে যার বদলে সেই রেল কর্মচারী কোন সন্তান অথবা কোন আশ্রিত কে রেলের চাকরি দেওয়া হয়।
৫)প্রত্যেক রেলকর্মচারী প্রথম দুই সন্তানের ক্ষেত্রে পড়াশোনার জন্য সমস্ত রকম ভাতা রেলের তরফ থেকে দেওয়া হয়।
যা প্রথম দুই সন্তান পিছু বছরে ২৭,০০০ টাকা।
৫) প্রথম বাচ্চা হবার পর দ্বিতীয় বাচ্চা হওয়ার সময় যদি যমজ সন্তান হয় তাহলে তিনটি সন্তান কে ই Children education allowance দেওয়া হয়।
৬) যদি কোন রেলকর্মচারী সন্তান প্রতিবন্ধী হয় তাহলে এই ভাতা তার ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়।
অর্থাৎ ২৭,০০০×২ = ৫৪,০০০ টাকা।
যদি এরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে তাহলে হোস্টেল খরচ দেওয়া হয় যা বছরে ৮১,০০০ টাকা।
আগের মতোই যদি কোন প্রতিবন্ধী সন্তান হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে তাহলে তার ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৬২,০০০ হবে
৭) রেলের নিয়মানুযায়ী একজন কর্মচারী প্রথম স্ত্রী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না।
কিন্তু যদি প্রথম স্ত্রী মারা যায় এবং দ্বিতীয় বিয়ে করতে হয় তাহলে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম দুই সন্তানকেও Children education allowance দেওয়া হয়।
৮) যদি দ্বিতীয় স্ত্রী রেল কর্মচারী হয় সেক্ষেত্রেও আগের মতই প্রথম দুই সন্তানের ক্ষেত্রে ১৮০×২ =৩৬০ দিনের মাতৃকালীন ছুটি দেওয়া হয় এবং পিতা কে ১৫ দিনের পিতৃকালীন ছুটি দেওয়া হয়।
৯) যে সমস্ত রেল কর্মচারী ১/১/২০০৪ এর আগে চাকরি পেয়েছে চাকরি থেকে অবসরের পর তারা আজীবন পেনশন এর সুবিধা পান।
তাদের মৃত্যুর পর তাদের বিধবা স্ত্রী এই পেনশন এর সুবিধা পাবেন।
১০) বিধবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর পূর্ণরূপে প্রতিবন্ধী অথবা অবিবাহিত মেয়ে অথবা বিধবা মেয়ে এই পেনশন এর সুবিধা পাবেন।
যে সমস্ত রেল কর্মচারী রেলের ইউনিয়নের অফিসের ব্যারিয়ার তাদের জন্য বছরে অতিরিক্ত ছটি ছুটি দেওয়া হয় রেল আধিকারিক এর সঙ্গে মিটিং এর জন্য।
যেমন, ইনফর্মেশনাল মিটিং এবং PNM
১১) যে সমস্ত রেলকর্মচারীর খেলাধুলার প্রতি রুচি রয়েছে এবং রেলের তরফ থেকে হওয়া খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করে তাদের কে প্রতিদিন দ্বিতীয়ার্ধে ডিউটি না করিয়ে খেলাধুলার প্র্যাকটিসের জন্য ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
এদের কেও অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হয় যখন এরা কোন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
১২) যদি কোন রেল কর্মচারী কে তার কর্মস্থল থেকে দূরে কোথাও ট্রান্সফার করা হয় তাহলে তাকে এবং তার সম্পূর্ণ পরিবার কে ট্রান্সফার পাস দেওয়া হয়।
এই ট্রান্সফার পাসের ভ্যালিডিটি হল দু মাস।
এছাড়াও নতুন জায়গায় যাওয়ার সময় বাড়ির সমস্ত জিনিসপত্র বহনের খরচ রেলের তরফ থেকেই দেওয়া হয়।
১৩) প্রত্যেক রেল কর্মচারী কে রিটারমেন্ট এর সময় নিজের গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য ফ্যামিলি পাস দেওয়া হয়।
এই পাসের ভ্যালিডিটি ও তিন মাস।
এছাড়াও বাড়ির জিনিসপত্র বহন করে গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলাদাভাবে ভাতা দেওয়া হয়
যদি কোন রেলকর্মচারী নিজের বাড়ি না থাকে তাহলে থাকার জন্যে তাকে ভাতা দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকলে ২৪% মফস্বল এলাকায় ভাড়া থাকলে ১৬% এবং গ্রামাঞ্চলে ভাড়া থাকলে ৮% অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়।
এই ছিল সে সমস্ত সুবিধা যা প্রত্যেকটি রেল কর্মচারীকে দেওয়া হয় যদিও এই সুবিধা গুলি সময় সময় সংশোধন হতে থাকে।
Comments
Post a Comment