গ্যাংস্টার সম্রাট দাউদ ইব্রাহিম

১৯৯৩ এর সিরিয়াল মুম্বাই বোমা বিস্ফোরণ...

যে বিস্ফোরণে ১৪০০ জন মানুষ আহত হন এবং ২৫৭ জন মারা যায়।

সেই সময় এই বিস্ফোরণ সমগ্র ভারতবর্ষ কে স্তম্ভিত করে দেয়।
এই বিস্ফোরণের সাথে-সাথে আরো একটি নাম প্রকাশ পেতে শুরু করে যে নাম ছিল "দাউদ ইব্রাহিম"

এই বিস্ফোরণের ২৭ বছর পরে আজও এই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন কে ধরা সম্ভব হয়নি।

ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানের করাচি শহরে লুকিয়ে রয়েছে।

এই ২৭ বছরে ভারত সরকার অনেকবার মানুষ কে এই বলে আশ্বস্ত করেছে যে দাউদ ইব্রাহিম কে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে ভারতে নিয়ে আসা হবে।
কিন্তু আজ অব্দি কোন সরকার ই এই কাজে সফল হয়নি।

১৯৯০ এর দশকে দাউদ ইব্রাহিম প্রথমে পাঠান গ্যাং কে শেষ করে।

যার পর দাউদ ইব্রাহিমের আধিপত্য সমগ্র মুম্বাই তে বাড়তে থাকে।

ধীরে ধীরে দাউদ ইব্রাহিম ক্রাইম এর সিঁড়ি চড়তে থাকে একটা সময় পরে মুম্বাইয়ের ডন হয়ে যায়।


যদিও সেই সময় দাউদ ইব্রাহিম কে বহুবার গ্রেপ্তার করা হয়।

কিন্তু সেই সময় মুম্বাইয়ের মানুষ তার ত্রাস বা ভয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে চাইতো না।
যে কারণে দাউদ ইব্রাহিম খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিল যে আর কেউ তার কিছু করতে পারবে না।

কিন্তু ১৯৯৩ এর মুম্বাই বিস্ফোরণের পর দাউদ খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিল যে মুম্বাইতে থাকা তার পক্ষে আর নিরাপদ নয়।
কেননা এই ঘটনার পর মুম্বাই পুলিশ পুরোপুরিভাবে অ্যাক্টিভেট হয়ে যায়, যে কারণে সেই সময় মুম্বাই পুলিশ একপ্রকার প্রতিজ্ঞা করে ফেলে যে মুম্বাই থেকে সমস্ত  আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এবং তাদের সমস্ত রকম কার্যকলাপ কে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।

আর এই ভয় থেকেই দাউদ ইব্রাহিম প্রথমে ভারত থেকে দুবাইতে পলায়ন করে এবং তারপর সেখান থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করে।

এবং তখন থেকেই ভারত সরকার এবং ভারতের গুপ্তচর সংস্থা দাউদ এর ওপর অনেক রকমের মিশন চালিয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সেই সমস্ত মিশন ব্যর্থ হয়েছে।

দাউদ ইব্রাহিম ভারত থেকে পাকিস্তানে পলায়ন করার পর পাকিস্তান সরকার বুঝে যায় যে এই দাউদ কে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর সুবর্ণ সুযোগ তাদের হাতে এসে গেছে।

আর এই কারনেই আজও দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানে জামাই আদর পাওয়া একজন অতিথি যাকে থ্রি টিয়ার সিকিউরিটি দেওয়া হয় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক।


দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ভারত বহুবার পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু দাউদ ইব্রাহিম যে পাকিস্তানের লুকিয়ে রয়েছে এই সত্যি কথাটা পাকিস্তান মানতেই রাজি নয়।

যদিও এর আগে একবার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল যখন দাউদ ইব্রাহিম কে ধরে জীবিত অবস্থায় ভারতে আনার সুযোগ ছিল ভারতের কাছে যখন মুম্বাই বিস্ফোরণের পর দাউদ ইব্রাহিম ভারতের সবথেকে বড় উকিল রাম জেঠমালানির সঙ্গে কথা বলে।

দাউদ সেসময় রাম জেঠমালানি কে জানায় যে, সে ভারতে আসতে চায় এবং ভারতে এসে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়।

কিন্তু তার দুটি শর্ত ছিল। 

১) দাউদ এর সমস্ত পেন্ডিং কেস খারিজ করতে হবে এবং তার ওপর শুধুমাত্র মুম্বাই বিস্ফোরণের কেস ই চলবে।
২) ভারত সরকারের হাতে আত্মসমর্পণ করা মাত্রই তাকে বেল দিয়ে দিতে হবে।

কিন্তু সেই সময় দিল্লীর সিংহাসনে আসীন কংগ্রেস সরকার দাউদের এই শর্ত মানতে রাজি ছিল না।

আর এই কারনেই দাউদ সেই সময় ভারত আসার মত বদলে ফেলে।

সেইভাবে দেখতে গেলে এই শর্ত দুটো মেনে নিলে দাউদ ইব্রাহিম কে অবশ্যই ভারতে আনা যেত।

কিন্তু এই শর্ত দুটো মেনে নেওয়া সরকারের পক্ষে সত্যিই কঠিন ছিল।

সত্যি কথা হলো এটাই যে দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে আনার জন্য Political power জরুরী ছিল অর্থাৎ যদি সরকার সদর্থক ভাবে চেষ্টা করে বা চায় যে দাউদ ভারতে ফিরে আসুক তবেই তাকে ভারতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

যদিও বাস্তবে দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে না ফিরিয়ে আনার পেছনে অনেক বড় কারণ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে দাউদ ইব্রাহিমের কানেকশন ভারতের কিছু হেভিওয়েট নেতার সাথে রয়েছে।

তাই তাকে যদি ভারতে আনা হয় এবং ভারতে এনে যদি তার বিচার শুরু হয় তাহলে সেই সমস্ত হেভিওয়েট নেতার নাম এবং আসল চেহারা জনসমক্ষে চলে আসবে।

তাই সবথেকে বড় কারণ হল এই পলিটিক্যাল কানেকশন যে কারণে বারবার দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে আনার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে পর্দার পেছন থেকে ।

দ্বিতীয় কারণ হলো ISI এবং RAW এর শত্রুতা।

যারা জানেন না তাদের জন্য বলে দিই..

পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI এবং ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW এদের দুজনের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক।

আজ ISI সব রকম ভাবে দাউদ ইব্রাহিম কে সিকিউরিটি দেয়।
এছাড়াও পাকিস্তান গভমেন্ট দাউদ কে সমর্থন করে। পাকিস্তান সরকারের হাত দাউদের মাথার উপর রয়েছে।

তৃতীয় আরেকটি বড় কারণ হল 

যদি দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে আনা সম্ভব হয়েও যায় তবুও তার ওপর পেন্ডিং থাকা সমস্ত কে চালু করে বিচার প্রক্রিয়া চালানো কোনভাবেই সম্ভব হবে না কারণ পাকিস্তান সরকার তখন এই কাজে বাঁধা দিতে শুরু করবে, ঠিক যেমন ছোটা রাজন এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।

ছোটা রাজন কে ইন্দোনেশিয়ার বালি শহর থেকে গ্রেপ্তার করা
 হয়।

এই ছোটা রাজন ই ছিল গুলশান কুমারের হত্যাকারী।

কিন্তু যখন ইন্দোনিশিয়ার বালি থেকে ছোটা রাজন কে গ্রেপ্তার করা হয় তখন ইন্দোনেশিয়া সরকার শর্ত দেয় যে তার অর্থাৎ ছোটা রাজন এর ওপর শুধুমাত্র মুম্বাই বিস্ফোরণের মামলা ই চালাতে হবে। এবং বাকি সমস্ত পেন্ডিং কেস খারিজ করে দিতে হবে।

আর ঠিক এই কারণেই যদি দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েও যায় তবুও ভারত সরকারের পক্ষে দাউদ এর উপর থাকা সমস্ত মামলার বিচার প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব হবে না যতটা দেশের মানুষ আশা করে আছে।

পৃথিবীর টপ টেন ক্রিমিনাল এর মধ্যে দাউদ ইব্রাহিম হলো একজন।

শুধু তাই নয়....

এই দাউদ ইব্রাহিম ই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিত্তশালী ক্রিমিনাল।

যে কেউ শুনলে অবাক হবেন যে আজ দাউদ ইব্রাহিমের কাছে আজ ৭ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তি রয়েছে।

এছাড়াও পাকিস্তানের তার নয়টি ঝাঁ-চকচকে আকাশচুম্বী অট্টালিকা রয়েছে।

মজার ব্যাপার হল এই প্রত্যেকটা বাড়ির ঠিকানা ভারত সরকারের কাছে রয়েছে কিন্তু তার পরেও দাউদ ইব্রাহিম কে গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তার করে ভারতে নিয়ে আসা ভারতের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব।

কেননা দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে নিয়ে আসার পর ভারত সরকার কে অনেক ধরনের পলিটিক্যাল ইস্যুর সামনাসামনি হতে হবে এবং সেগুলোর মোকাবিলা করতে হবে।

এছাড়াও এতদিন ধরে চাপা থাকা পাকিস্তানের সেই সমস্ত রহস্য সামনে চলে আসবে যা দাউদ এর কাছে আজ আর অজানা নয়।

তাই পাকিস্তান কোনভাবেই চাইবে না যে দাউদ ইব্রাহিম ISI এর কার্যপ্রণালীর গোপন তথ্য ভারত সরকার কে দিক।

সেই সব দিক থেকে বিচারকরে দেখতে গেলে এটা জলের মত পরিস্কার যে দাউদ ইব্রাহিম কে ভারতে নিয়ে আসা একপ্রকার অসম্ভব।

তাই একটাই রাস্তা রয়েছে....

হয় দাউদ ইব্রাহিম কে পাকিস্তানেই মেরে ফেলতে হবে আর না হয় দাউদ ইব্রাহিম কোনদিনই ধরা পড়বে না।

এই ছিল দাউদ ইব্রাহিমের ওপর আজকের স্পেশাল আর্টিকেল।

 আশা করবো সবার ভালো লেগেছে।


 ভালো লাগলে যত বেশি সম্ভব ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এবং বাকি সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

ধন্যবাদ.... শুভরাত্রি🙏

Comments

Popular posts from this blog

অস্থি বিসর্জন কি এবং কেন

রোগ হরণী মা শীতলা

পবিত্র শালগ্রাম শিলা নিয়ে কিছু কথা