বিশ্বের বিস্ময় "বুর্জ আল আরব"
অনেকেই অনেক ফাইভ স্টার হোটেল দেখে থাকবেন অথবা সেই সমস্ত হোটেলের ব্যাপারে শুনে থাকবেন।
কিন্তু এমন কোন হোটেলের নাম কি জানা আছে যা সেভেন স্টার??
বলে রাখি সারা পৃথিবীতে এরকম একটা মাত্রই হোটেল আছে যা আদতে সার্টিফাইড সেভেন স্টার হোটেল।
অনেকেই অনেক সেভেন স্টার হোটেল এর ব্যাপারে শুনে থাকবেন কিন্তু এই হোটেলে একমাত্র হোটেল যা একটি সেভেন স্টার হোটেল হওয়ার জন্য সার্টিফাইড।
আর এই হোটেলের নাম "বুর্জ –আল–আরব"
চিত্র:- বুর্জ আল আরব
এই লেখায় তুলে ধরব এই হোটেলের কিছু রোমাঞ্চকর বিশেষত্ব।
বুর্জ আল আরব দুবাই তে তৈরি একটি সেভেন স্টার হোটেল যা সারা পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে সেরা হোটেল।
কেননা হাজার খুঁজলেও কারো পক্ষেই এই হোটেলের কোথাও কোনো খুঁত খুঁজে বের করা অসম্ভব।
এই হোটেলের প্রতিটি কোনা কে অত্যন্ত যত্নের সাথে নিপুন হাতে সুন্দর এবং সৌখিন ভাবে সাজানো হয়েছে।
আর তাই প্রথমবার যে এই হোটেলে আসবে খুশিতে একপ্রকার পাগল হয়ে যেতে বাধ্য।
এই হোটেল তৈরি হয় ১৯৯৯ সালে।
আর এই হোটেলের নির্মাতা দুবাইয়ের প্রিন্স শেখ মহম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম যিনি এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে এই বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করেন।
এই ব্যক্তি এমনিতে তেলের ব্যবসায়ী তথা দুবাইয়ের অভিজাত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন নামী ব্যক্তি।
এই হোটেল বানানোর পিছনে তার উদ্দেশ্য ছিল উন্নত ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়ে দুবাই এ এমন একটা হোটেল তৈরি করা যে হোটেলে সারা বিশ্বের থেকে সমস্ত অভিজাত মানুষেরা এসে থাকতে পারে এবং প্রচুর পয়সা খরচ করতে পারে।
আর এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই তার এই হোটেল নির্মাণ।
জানিয়ে রাখি আরবি ভাষায় বুর্জ শব্দের অর্থ হলো টাওয়ার।
আর বুর্জ –আল–আরব এর অর্থ হল আরবের টাওয়ার।
সমুদ্র তটের উপর নির্মিত এই হোটেলের মোট উচ্চতা ১০৫৩ ফুট।
মাটির উপরে এই হোটেলে যতটা রয়েছে মাটির নিচেও ঠিক ততটাই রয়েছে।
এই হোটেলের নির্মাণকার্য ১৯৯৪ সালে শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৯৯ সালে।
এবার একবার ভাবুন এত বড় এত বিলাসবহুল হোটেলের নির্মাণ কাজ কতটা তাড়াতাড়ি হলে এত তাড়াতাড়ি শেষ করা সম্ভব!!!
এই হোটেলে পৌঁছতে চাইলে যে কেউ হেলিকপ্টারের সাহায্য নিয়েও এই হোটেলে পৌঁছাতে পারে, যে হেলিকপ্টার সোজা এই হোটেলের ছাদে এসে ল্যান্ড করে।
অথবা বাই রোড ও পৌঁছানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
এই হোটেলের সমস্ত অতিথি সমস্ত কাস্টমারের জন্য সবসময় ১৮ টি লিফট চালু রয়েছে।
আর এই পুরো হোটেল বিল্ডিং এর ডিজাইন যিনি করেছেন তিনি হলেন বিখ্যাত আর্কিটেক্ট টম রাইট।
টম রাইট এই হোটেল কে ট্রাডিশনাল এবং ফিউচার আরবের মত বানানোর জন্য নিজের সমস্ত শক্তি এবং বুদ্ধি লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
যে কারণে তিনি দারুণভাবে সফলও হন।
এরপর ওনার তৈরি নকশার উপর ভিত্তি করে এই হোটেলের মোট ২০২ টি কামরা কে ব্রিটেনের বেশ কয়েকজন সেরা ইঞ্জিনিয়াররা তৈরি করেন।
যে আইল্যান্ডের উপর এই হোটেল নির্মিত তার নাম আগে ছিল "শিকাগো বিচ" যা পরে বুর্জ আল আরব নামে পরিচিত হয়।
এই হোটেলে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে যা মাটি থেকে ৬৬০ ফুট উঁচুতে নির্মিত।
এই রেস্টুরেন্টের নাম "আল মুনতাহা"
এই হোটেলে একটি গলফ কোর্স রয়েছে যেখানে বিখ্যাত গলফ প্লেয়ার টাইগার উডস গলফ খেলে গেছেন।
বিখ্যাত টেনিস প্লেয়ার রজার ফেডেরারও এই হোটেলে একটি ম্যাচ খেলে গেছেন।
আর এরকমই আরো অনেক মিডিয়া ইভেন্টস এই হোটেলে প্রায়শই চলতে থাকে।
এই হোটেলের লবি খুব ই সুন্দর যেখানে ভীষণ সুন্দর রকমের টেক্সচার তৈরি করা হয়েছে।
এই হোটেলের প্রতিটি Columns সোনার পাত দিয়ে সাজানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই হোটেলের প্রতিটি ফ্লোরে বিশ্বের সবথেকে দামি এবং সবথেকে সুন্দর মার্বেলের ব্যবহার করা হয়েছে।
এই হোটেলে প্রবেশ করা মাত্র যে কাউকে গোলাপ জল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
এছাড়াও এই হোটেলের Atrium এর মাঝামাঝি জায়গায় একটি ফোয়ারা রয়েছে যে ফোয়ারার জল ১৩০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে।
এই হোটেল যতটা সুন্দর এই হোটেলের লিফট ও ঠিক ততটাই সুন্দর।
এই হোটেলের ১৮ টি লিফটের দরজা ই সোনা দিয়ে তৈরি করা।
যে দরজা লিফট থেকে একজন অতিথি কে সোজা তার রুমের দরজায় নিয়ে দিয়ে দাঁড় করাবে।
এই হোটেলে মোট ২০২ টি কামরা রয়েছে।
যার একটি সাধারণ অথবা বেসিক রুমের শুধু এক দিনের ভাড়া হল এক লাখ সত্তর হাজার টাকা।
হোটেলের প্রতিটি কামরা কে খুব ভালো ভাবে সাজানো হয়েছে এবং হোটেলের প্রতি অতিথি বা কাস্টমার পিছু ৬ জন করে এমপ্লয়ী সাহায্যের জন্য সবসময় তৈরি থাকে।
অর্থাৎ একজন অতিথি কে সেবা করার জন্য রয়েছে ৬ জন।
এবার আশা করি বুঝতেই পারছেন এই হোটেলে গেলে কিরকম সেবা পাওয়া যাবে।
নিজের রুমে ঢোকার মুখে প্রত্যেক অতিথির জন্য একজন করে বাটলার নিযুক্ত করে দেওয়া হয় যে বাটলারের কাজ হল হোটেলে আসা অতিথির যা প্রয়োজন তা হাতের কাছে এনে দেওয়া।
এই হোটেলের প্রতিটি রুম রিমোট দিয়ে অপারেট করা হয়।
।
যার অর্থ হলো টিভি চালানো থেকে শুরু করে সবকিছুকেই আপনি রিমোট দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারবেন তা সে জানলার পর্দা সরানো হোক অথবা রুমের টেম্পারেচার সেট করাই হোক।
হোটেলের প্রত্যেক টা রুম কে অত্যন্ত ধ্যান দিয়ে বানানো হয়েছে।
হোটেলের প্রতি রুমের মেঝেতে যে কার্পেট বিছানো রয়েছে তার মূল্য ১৫ হাজার ডলার।
আর শুধু কার্পেট ই নয়...
এই হোটেলের প্রতিটি রুমের প্রতিটি বিছানা এবং সেই বিছানায় থাকা বালিশ কেও বিশেষভাবে বানানো হয়েছে, যা এক ধরনের পাখির পালক দিয়ে তৈরি যে পাখি শুধু আন্টার্টিকায় পাওয়া যায়।
যে কারণে এই হোটেলের প্রতিটি বিছানা এবং বালিশ খুবই নরম ও আরামদায়ক।
খাবারের মেনু কার্ড তো অনেক দেখেছেন।
কিন্তু এই হোটেলে গেলে আপনি বালিশের জন্যেও মেনু কার্ড পাবেন।
যেমন বালিশ চাইবেন পাবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়াও এই হোটেলের প্রতিটি বাথরুমে "Jacuzzi" কোম্পানির তরফ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি সাবান এবং পারফিউম এর ব্যবস্থা রয়েছে।
রয়েছে স্পা বাথের সুবিধা, অ্যারোমাথেরাপি ব্যবস্থা রয়েছে।
স্নান করতে করতে মিউজিক শোনার ব্যবস্থা।
তার সাথে রয়েছে দামি সুগন্ধি বাথ অয়েল।
হোটেলের তরফ থেকেও রয়েছে আরও অনেক অনেক সুবিধা।
এতক্ষণ যে কামরার কথা বলছিলাম সেগুলো ছিল একদম ই সাধারণ কামরা।
এই হোটেলের সবথেকে দামি রুমের একদিনের ভাড়া হল সাড়ে এগারো লক্ষ টাকা।
আজ্ঞে হ্যাঁ মাত্র ২৪ ঘন্টার ভাড়া!
তাই এই রুম ভাড়া নিতে হলে আপনাকে সুপার রিচ হতেই হবে।
এই হোটেলের সবথেকে ভালো রুম গুলোর ব্যাপারই আলাদা।
কারণ এই রুম গুলোর চারিদিক দামি সোনা দিয়ে নকশা করা রয়েছে। চারিদিকে সোনার পাত বসানো রয়েছে।
বসানো রয়েছে সবচেয়ে দুর্লভ এবং দামি মার্বেল।
তার সাথে রয়েছে দুর্দান্ত সব সাজসজ্জা।
এই হোটেলের বেডরুম এবং লিভিং রুম আরো দুর্দান্ত যেখান থেকে খুব সহজেই সুন্দর মনোরম সমুদ্র কে দেখা যায়।
এছাড়াও এইসব রুমের অতিথিদের তাদের ব্যবহারের জন্য একটি প্রাইভেট লিফটও দেওয়া হয় যে লিফট সোজা সেই অতিথির রুম থেকেই শুরু হয় ।
এই রুমে থাকা বিছানার কথা বলতে গেলে যা বলা দরকার তা হলো এই রুমের অতিথিদের Revolving Bed দেওয়া হয়।
এর সাথে সাথে ইন্টারনেট দুনিয়ার সাথে কানেক্টেড থাকার জন্য এই রুমের প্রতিটি অতিথি কে ২৪ ক্যারেট সোনার আইপ্যাড দেওয়া হয় যে আইপ্যাডে অ্যাপেল কোম্পানির লোগোর সাথে সাথে বুর্জ আল আরবের লোগো লাগানো থাকে।
এই আইপ্যাড দেওয়ারও বিশেষ কারণ আছে।
আর কারণটি হলো বিলাসবহুল হোটেল হওয়ার দরুন এখানে থাকা অতিথীরা যাতে রাজকীয় ভাব অনুভব করতে পারে সেই জন্যই এই রীতি।
রেস্টুরেন্টের কথা বলতে গেলে এই হোটেলে রেস্টুরেন্টের কোন কমতি নেই।
মোট নয়টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
যেখানে আপনি যা খেতে চাইবেন খেতে পারেন।
যদি আপনি সূরা পানে অভ্যস্ত হোন তাহলে এখানে তার ব্যবস্থাও আছে।
এখানে সোনা দিয়ে তৈরি বার রয়েছে যেখানে স্বাচ্ছন্দে মদ্যপান করতে পারবেন যা যে কাউকে এক আলাদা রোমাঞ্চকর অনুভূতি এনে দেবে।
এই নয়টি রেস্টুরেন্ট ছাড়াও আরও একটা বিশেষ রেস্টুরেন্ট রয়েছে যে রেস্টুরেন্টে একটা বিশেষ ধরনের বিশাল অ্যাকুরিয়াম রয়েছে।
তাই এই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে বসলে খাবার খেতে খেতে ওই বিশাল অ্যাকুরিয়াম ভাসতে থাকা দামি সুন্দর মাছেদের সাঁতার দেখার সৌভাগ্যও হয়ে যাবে।
পুরো হোটেল টাই একটা আলাদা অনুভুতি, আলাদা রোমাঞ্চ মেশানো।
কেমন লাগলো এই হোটেল ঘুরে অবশ্যই জানাবেন।
Comments
Post a Comment