গণধর্ষণের প্রতিশোধ নেওয়া এক রবিনহুডের গল্প


ইনি কে জানেন....???

ইনি ফুলন দেবী

হ্যাঁ সেই দুর্ধর্ষ ডাকাত, দস্যুরানী, গণধর্ষণের প্রতিশোধ নেওয়া চম্বলের ত্রাস, যিনি দস্যুরাণী হয়েও ছিলেন মায়ারাণী, এবং সবশেষে লোকসভা সদস্য।

১৯৬৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের জালৌন জেলার ঘোড়া কা পুরয়া নামক অজ পাড়া গাঁয়ে হিন্দু ধর্মের নিম্ন বর্ন মাল্লার সম্প্রদায়ের (পেশা হচ্ছে নৌকা চালানো) এক দরিদ্র পরিবারে ফুলনের জন্ম।

এরপর মাত্র ১১ বছর এর শিশু ফুলন এর বিবাহ দেওয়া হয় ৩০ বছর বয়সী পুট্টিলাল নামের এক লোকের সাথে যিনি ছিলেন অসৎ চরিত্রের পুরুষ।

স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ফুলন পিতৃগৃহে ফিরে আসে।

পিতৃগৃহে ফিরেই খুড়তুতো ভাই মায়াদীন এর রোষানলে পড়তে হয় তাকে।

সে ফুলনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে থানায় মামলা করে। তিন দিনের জেল হয় ফুলনের, এবং এখানে ধর্ষনের শিকার হন ফুলনদেবী। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে পরিবার ও গ্রাম থেকে বর্জন করা হয়!

এরপর ১৯৭৯ সালে এক ডাকাত দলের সাথে জড়িয়ে যায় ফুলন।

যদিও কিভাবে সে জড়িয়ে গেল এ নিয়ে রয়েছে রহস্য।

কেউ বলেন ডাকাত দল ফুলনের অগ্নিমূর্তি ও সাহসী স্বভাবের কারনে তাকে অপহরণ করে। আবার কেউ বলেন ফুলন সমাজের নির্যাতন ও অপমানের প্রতিশোধ নিতে স্বেচ্ছায় ডাকাত দলের সাথে যোগ দেয়।

সেই ডাকাতের দলনেতা গুজ্জর সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন।

নাম- বাবু গুজ্জর।

বাবু গুজ্জর ছিল নিষ্ঠুর ও কামুক স্বভাবের লোক। বাবু গুজ্জরের কামুক দৃষ্টি ফুলনের দেহের উপর পরে কিন্তু ওই দলের দ্বিতীয় দলনেতা বিক্রমের জন্য ফুলন, বাবু গুজ্জরের কামনরা শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পায়। একদিন রাত্রে দলনেতা বাবু গুজ্জর ফুলন কে ধর্ষণ করার প্রচেষ্টা করে । প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্রম মাল্লা বাবু গুজ্জর কে হত্যা করে ও নিজের দলের নেতা হয়।

এরপর ফুলন তার সম্মান রক্ষা করা বিক্রম মাল্লার প্রতি প্রেমে পড়েন।

অবশেষে বিক্রম তাকে বিবাহ করে ও পত্নীর মর্যদা দেন।

বিয়ের পর ডাকাত দলটি ফুলনের প্রথম স্বামী পুট্টিলাল বাস করা গ্রামে লুন্ঠন করে। ফুলন পুট্টিলাল কে টেনে নিয়ে এসে জনসমক্ষে শাস্তি দেয় ও খচ্চরের পিঠে উল্টা করে বসিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে এসে বন্দুক দিয়ে প্রহার করে ।

এরপর প্রায় মৃত অবস্থায় পুট্টিলালকে ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় কম বয়সের বালিকা মেয়ে বিবাহ করা পুরুষদের জন্য সাবধানবাণী স্বরূপ একটি পত্র রেখে যায়।

এর মধ্যেই একদিন ধনী ঠাকুর বংশের ছেলের বিয়েতে সদলবলে ডাকাতি করতে যান ফুলন। সেখানে ফুলন খুঁজে পান এমন দুজন মানুষকে, যারা তাকে ধর্ষণ করেছিল। ক্রোধে উন্মত্ত ফুলন দেবী আদেশ করেন বাকি ধর্ষণকারীদেরও ধরে আনার। কিন্তু বাকিদের পাওয়া না যাওয়ায় লাইন ধরে ঠাকুর বংশের ২২ জনকে এক সঙ্গে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হয়। বেমাইয়ের এই গণহত্যা ভারতবর্ষে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

এরপর ফুলনকে ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে সরকার। আবার ফুলনের পক্ষেও ভারত জুড়ে চলে আন্দোলন। একপর্যায়ে ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন সরকার সন্ধিপ্রস্তাব করেন এবং ফুলন সন্ধির জন্য বেশ কিছু শর্ত দেন।

শর্তসমূহ হচ্ছে:

১) ফুলন ও তার অন্যান্য সঙ্গীরা কেবল মধ্যপ্রদেশে আত্মসমর্পন করবে, বিচারের জন্য তাদের উত্তরপ্রদেশে নেওয়া হবেনা।
২) ফাঁসী দিতে পারবে না ও ৮ বৎসরের অধিক সময় কারাবাস হবেনা।
৩)সম্পর্কীয় ভাতৃ মায়াদিন অবৈধভাবে দখল করা জমি ফুলনের পিতাকে ফেরত দিতে হবে।
৪) ফুলনের পিতা মাতা কে মধ্যপ্রদেশে সংস্থাপিত করতে হবে।
৫) সরকার ফুলনের ভাইকে চাকুরি দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৬)সরকার তার সবকয়েকটি শর্তে সম্মত হয়।

বেহমাই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই বৎসর পর ১৯৮৩ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৮০০০ জন দর্শকের উপস্থিতিতে ফুলন আত্মসমর্পন করেন। ১৯৯৪ সনে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।

পরে ফুলন সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ এবং ’৯৯-তে পরপর দুবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০১ সালের ২৫ জুলাই সংসদ থেকে বের হয়ে আসার সময় নয়া দিল্লীতে ফুলন দেবীকে হত্যা করা হয়। ঠাকুর পরিবারের তিন ছেলে শের সিং রাণা, ধীরাজ রাণা এবং রাজবীর ফুলন দেবীকে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়।

১৯৯৪ সনে ফুলন দেবীর জীবনের উপর আধারিত ব্যাণ্ডিট কুইন নামক চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।



এই সেই ছবি




ভালো লাগলে লাইক , কমেন্ট করবেন।
সাথে ফেসবুক  হোয়াটসঅ্যাপ এবং বাকি সকল সোশ্যাল প্লাটফর্মে শেয়ার করবেন।

Comments

Popular posts from this blog

অস্থি বিসর্জন কি এবং কেন

রোগ হরণী মা শীতলা

পবিত্র শালগ্রাম শিলা নিয়ে কিছু কথা