দুবাই ও তার কালো রহস্য
আবু ধাবি, দুবাই, আজমান, শারজা, রাস-আল- খাইমা, ফুজাইরাহ, এবং উমান-আল- কুয়াইন এই ৭ টা Emirates নিয়ে UAE তৈরি৷
যার মধ্যে মুখ্য Emirates হলো দুবাই৷
পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দুবাই চিরকালই নিজেদের আকাশচুম্বী অট্টালিকা, Night life, এবং বড়লোকি ব্যাপার-স্যাপার দিয়ে চিরকাল বাকি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
কিন্তু স্বপ্নের শহর দুবাই এর এই ঝাঁ-চকচকে জীবনের পেছনে এমন অনেক কালো রহস্য আছে যা অনেকের অজানা।
আজকের লেখায় দুবাইয়ের এই ঝাঁ চকচকে জীবন থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়ে পর্দার পেছনে থাকা সেই কালো দিক গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো যা শোনার পর হয়তো অনেকেই দুবাই যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিতীয় বার ভেবে দেখতে বাধ্য হবে।
দুবাই নিয়ে বলতে বসলে সবার প্রথমে যা মাথায় আসে তা হল সেখানকার আকাশচুম্বী অট্টালিকা এবং বিশাল বিশাল সব শপিং মল।
আর এগুলো দেখার পর প্রথমেই যে কারো মাথায় দুবাইয়ের সৌন্দর্যের কথাই আসবে।
কিন্তু কেউ কখনো ভেবে দেখেছেন এই আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর শপিংমল গুলো তৈরি হলো কিভাবে?
আজ্ঞে হ্যাঁ....
এগুলো রাতারাতি তৈরি হয়নি।
বরং এই ইমারত গুলো তৈরি করার জন্য ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশের মতো গরীব দেশ থেকে গরীব মানুষেরা দু'পয়সা বেশি কামানোর লোভে দুবাই আসে।
যার সুবিধা দুবাইয়ের বড়লোকেরা নেয়৷
দুঃখের বিষয় হল এই ইমারত গুলো তাড়াতাড়ি তৈরি করার জন্য এই গরীব মজুর গুলো কে দিনে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা শরীর পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া গরমে কাজ করতে হয় যে কারণে অনেক বড় বড় দুর্ঘটনাও হয়।
কিন্তু এখানকার বড়লোকেরা টাকার জোরে সেই সব কিছুকে চাপা দিয়ে দেয়।
আর এই গরিব দিনমজুরেরা যে ঘরগুলোতে থাকে সেগুলো আরো জঘন্য।
সেখানে দুজন মানুষের থাকার ঘরে দশ থেকে ১২ জনকে ঠেলেঠুলে চাপাচাপি করে থাকতে হয়।
এইজন্য দুবাইয়ের গগনচুম্বী ইমারত এবং সেখানকার শেখদের তারিফ করার আগে অবশ্যই একবার এই দিনমজুর গুলোর কথা ভেবে দেখবেন যারা এই ইমারত গুলো তৈরি করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, অথবা এগুলো তৈরি করতে গিয়ে নিজের প্রাণ পর্যন্ত হারায়৷
মরু দেশ গুলোতে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় এখানে রোজগারের উদ্দেশ্যে আসা গরিব মানুষদের সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করা হয়।
এদের মধ্যে কিছু মানুষ আবার এজেন্টদের চক্করে ফেঁসে যায়। বাকিরা দুবাই পৌঁছানোর পর সেখানকার মালিকেরা তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেয় অথবা বাজেয়াপ্ত করে নেয়।
আর এই কারণে তারা নিজের ইচ্ছে মত বাড়ি ফিরতেও পারে না।
এইজন্য কাজের উদ্যেশে দুবাই গেলে পাসপোর্ট সব সময় নিজের কাছে রাখুন কাউকে দেবেন না অন্যথায় আপনি অনেক বড় সমস্যায় পড়তে বাধ্য।
কিছুদিন আগে ঠিক এইরকম হয়েছিল মুম্বাইয়ের ফরিদা বেগমের সাথে।
এই মহিলা দুবাই তে যেখানে কাজ করতেন সেখানকার মালিক ওই মহিলার ৩ মাসের স্যালারি না দিয়ে তার দোকান বন্ধ করে এবং মহিলার পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যায়।
সেই মহিলা এখন আর মুম্বাই আসতে পারবেন না যতক্ষণ না তিনি তার পাসপোর্ট এ নির্ধারিত সময়ের বেশি সে দেশে থাকার কারণে যে জরিমানা হয়েছে তা শোধ করছেন।
আর যতদিন না শোধ হচ্ছে ততদিন তিনি দুবাইতে কোথাও কোনো রকমের চাকরিও করতে পারবেন না
আর সেই জরিমানার অঙ্ক টা হলো ২৯,০০০ দিরহাম৷
অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় মোট ৫,৯৬,৬৮৬.১৬ টাকা৷
এখন প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে গ্রেপ্তারির ভয় তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
তিনি এখন দুবাই এর স্থানীয় একটি ভারতীয় পরিবারের আশ্রয়ে রয়েছেন৷
একবার ভেবে দেখুন ওই মহিলার ওপর দিয়ে কি যাচ্ছে!!!
দুবাই পুরোপুরিভাবে একটি মুসলিম দেশ এবং সেখানে মুসলিম শরীয়ত অনুযায়ী তৈরি আইনের প্রচলন রয়েছে যা ভীষণ কড়া৷
তাই সে দেশে গেলে আমাদের প্রত্যেকের উচিত সেই আইন গুলো কে সম্মান করা, মেনে চলা।
আমাদের দেশে কোনো অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে একই হোটেলের কামরায় একসাথে থাকতে পারে না, এবং বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত সেক্স করতে পারে না।
কিন্তু দুবাইতে এত বেশি কড়াকড়ি যে দুজন ছেলেমেয়ে একে অপরের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও পারবে না৷
সেখানেও আমাদের দেশের মতই অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের বিয়ে না করে হোটেলের একই কামরায় থাকা এবং বিয়ে না করে সেক্স করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ৷
এছাড়া রমজান চলাকালীন এখানে কোন হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খাওয়া বারণ।
ভিক্ষে করা নিষিদ্ধ অন্যথায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড নিশ্চিত।
কিছুদিন আগে একজন ব্রিটিশ নাগরিক সে দেশে যায় এবং দুবাইয়ের একজন ট্যাক্সিচালক কে উত্তেজনার বশে আঙুল দেখিয়ে কথা বলে যে অপরাধে সেই বৃটিশ নাগরিককে জেলে অনেকজন ধর্ষকের মাঝে বন্দী করে রাখা হয়।
অন্য একটা কারণে আরো একজন ব্রিটিশ Couple কে এক মাস জেলে বন্দী থাকতে হয়েছিল।
কেননা সেই ব্রিটিশ যুগল একে অন্যের গালে চুমু খেয়েছিলেন।
এজন্য নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে দুবাই যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা থাকলে সাবধান হোন।
অনেকেই হয়তো জানেন যে সেক্স মদ এবং ড্রাগ নিয়ে দুবাইতে ভীষণ কড়া আইন রয়েছে।
কিন্তু যখনই এখানে রাত হয় এই সবকিছু পুরোপুরি বদলে যায়।
পৃথিবীর সবথেকে পুরনো ব্যবসা অর্থাৎ দেহ ব্যবসা এখানে দিনদিন ফুলে ফেঁপে উঠছে।
প্রায় ৩০ হাজার বেশ্যা রয়েছে দুবাই তে যারা এক ঘন্টার জন্য ৫০০ দিরহাম করে নেয়।
অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় 10,277 টাকা।
এখানে বেশ্যাবৃত্তির কোড ল্যাঙ্গুয়েজ হলো "লেডিস নাইট"
আর এই বেশ্যাবৃত্তি থেকে এখানকার বড়লোকেরা আরও বড়লোক হচ্ছে, আর এই কারণে এখানে নারী পাচার ও বাড়ছে যার মধ্যে বেশিরভাগ ই বাইরের মেয়ে৷
পুলিশ সবকিছু জেনেও চুপচাপ থাকে।
এজন্য যদি আপনি একজন মহিলা হন এবং যদি আপনি দুবাইয়ের কোন বার এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন তাহলে একটু সাবধান।
কেননা বার এর বাইরে আপনাকে একা দাঁড়াতে দেখলে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত যেকোনো ব্যবসায়ী আপনাকে অন্য কিছু ভাবতে পারে।
ইনফ্যাক্ট কিছুদিন আগেই এমনটা হয়েছে এক এশিয়ান মহিলার সাথে৷
সোনাপুর অর্থাৎ সোনার নগরী অর্থ তো এটাই বোঝায় তাই না?
দুবাইতেও এমন এক জায়গা আছে যার নাম সোনাপুর।
কিন্তু দুবাই গেলে যদি কখনো আপনি এই সোনাপুরে যান তাহলে দেখতে পাবেন সবকিছুই এখানে তার বিপরীত এবং ভীষণ খারাপ।
দুবাইতে কর্মরত মজুররা বেশিরভাগই থাকে এই সোনাপুরে।
এখানে ছোট ছোট এক কামরা ঘরে গাদাগাদি করে আট দশজন শ্রমিকদের থাকতে হয়।
প্রায় দেড় লক্ষ মজুর অত্যন্ত অসহায় ভাবে এখানে দিন কাটায়৷
এছাড়া আলাদা আলাদা শিফট অনুযায়ী একটা বেড কেই অনেক শ্রমিক কে শেয়ার করতে হয়৷
ঠিক সময়ে খাবারও পাওয়া যায় না আর যা খাবার পাওয়া যায় তা পর্যাপ্ত নয়।
যে বিশাল অট্টালিকা মল এবং হোটেল গুলো দেখিয়ে দুবাই সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই শ্রমিক গুলো হল সেই মানুষ যারা এগুলো নির্মাণ করেছে।
কিন্তু তা সত্বেও এই শ্রমিকরা এক দমবন্ধ করা অসহ্যকর পরিবেশে বাঁচতে বাধ্য।
এছাড়া এরা ঠিক সময়ে নিজেদের বেতন পায় না। তার ওপর এদের বেশির ভাগেরই পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়।
দুবাই লোকজনের কাছে এত বেশি পয়সা আছে যে তারা বুঝতেই পারেনা এই পয়সা গুলো তারা কোথায় কিভাবে খরচ করবে।
এইজন্য সোনা দিয়ে মোড়া গাড়ি, অথবা বাড়ি অথবা হোটেল কিংবা প্রতিরাতে বেশ্যাদের পেছনে খরচ করা হয়।
এখানকার রাজা মহম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম এর ব্যাক্তিগত জেট বিমান রয়েছে যার পেছনে প্রচুর টাকা প্রতিদিন খরচ হয়৷
দুবাই এর বুর্জ খালিফা তে একবার উঠতে লাগে ৪৮০ দিরহাম অর্থাৎ ভারতীয় টাকায়
৯,৮৬৩ টাকা এবং নামতে ৪৮০ দিরহাম৷
এখানকার শেখেরা এখন আর কুকুর বেড়াল পুষতে ইচ্ছুক নয়৷
তারা এখন সিংহ, চিতাবাঘ, বাঘ এসব পুষছে৷
তাও কেবলমাত্র লোক দেখানোর জন্য যাতে বাইরের লোকের কাছে তাদের আভিজাত্য বজায় থাকে।
কিন্তু এই পশু গুলোর কথা একবারও তারা ভাবে না।
এই পশু গুলোর জঙ্গলে নিজেদের স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচার অধিকার রয়েছে, আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম৷
এছাড়া এইসব পশু গুলো পোষ মানাতে গিয়ে অন্য অনেক লোকের জীবনহনি পর্যন্ত হয়।
শুধুমাত্র এদের শখের কারণে৷
দুবাই এর ব্যাপারে এমন আরও অনেক কথা আছে যেগুলো বলতে বসলে সকাল থেকে রাত হয়ে যাবে।
যেমন পানীয় জলের অপচয়....
৪০ লক্ষ গ্যালন জল শুধুমাত্র এখানকার গলফ খেলার মাঠ গুলো কে সবুজ রাখার জন্য ব্যবহার হয়৷
এখানে জাতিগত বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে বেতন দেওয়া হয়।
যেমন দক্ষিন আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান দেশের লোকেদের এখানে একই কোম্পানিতে একই রকম কাজের জন্য তৃতীয় বিশ্বের লোকদের তুলনায় অনেক বেশি বেতন দেওয়া এবং নেওয়া হয়৷
দুবাই এ কোন বাক স্বাধীনতা নেই।
পুলিশ এবং সরকার কর্তৃক এখানে মানুষের আওয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
প্রগতির নামে আজ দুবাই প্রকৃতির সাথে ছেলেখেলা করছে৷
দুবাই এর মোট আয়ের ২০% রিয়েল এস্টেট থেকে আসে৷
আর এই জন্য বিশ্বের ২০% ক্রেন দুবাই তে কাজ করে৷
দুবাই তে রোড অ্যাক্সিডেন্ট এ আহত কাউকে আপনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন না তার অবস্থা যতই খারাপ হোক, সে মরুক বা বাঁচুক৷
হাসপাতালে নিয়ে গেলে আপনাকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে, এমন কি জেল জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে৷
তাই এসবের জন্য এমার্জেন্সী অ্যাম্বুলেন্সে পরিষেবা রয়েছে যা প্রতিটি সড়কের ধারেই অবস্থিত৷
এই ছিল দুবাই এর দুবাই এর ঝাঁ চকচকে জীবনের পেছনে থাকা কিছু কালো দিক যা দুবাই যাওয়ার আগে জেনে রাখা দরকার৷
ভালো আরও অনেক দিক আছে যেগুলো পরে কোনো এক সময় আলোচনা করবো যদি অবশ্য পাঠকদের জানার ইচ্ছে থাকে।
Comments
Post a Comment