চীনা মাল বর্জন করুন

আজকের এই লেখায় আমি বলব কি করে চিন বারবার এত সস্তা জিনিস বানিয়ে ফেলে এবং তা সারা বিশ্বের বাজারে বিক্রি করে।

এমন উদাহরণ দেবো যা শুনে যে কারো মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য।

ধরুন, আপনি ভারতে কোনো ফ্যাক্টরি চালান।
সেখানে আপনাকে ইউনিট প্রতি সাড়ে চার টাকা করে বিদ্যুৎ খরচ  দিতে হয়।
অথচ বাস্তব ঘটনা হলো চিনে এমন অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেখানে ইউনিট প্রতি মাত্র নব্বই পয়সা করে বিদ্যুৎ খরচ দিতে হয়।

আর সেটা যদি এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড ফ্যাক্টরি হয় তাহলে এর চেয়েও কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।

এছাড়াও চীনে শ্রমিক পিছু খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

এখানে কান ধরে দশ, একশো বা হাজার যত জন শ্রমিককে ই ছাঁটাই করা হোক না কেন তার কোনো প্রভাব ফ্যাক্টরি মালিকদের ওপর পড়বে না কারণ এখানে কোনো শ্রমিক আইন নেই।
তাই সেই ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কেউ কোর্টে যেতে পারবে না।

আর এই ধরনের আইন এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার হওয়ার কারণে চীন অনেক সহজে এবং সস্তায় যে কোন মাল বানিয়ে বিক্রি করতে পারে।

তাদের লক্ষ্য একটাই আর  তা হলো কম্পিটিশন করতে হবে।

আর কম্পিটিশনের শর্ত একটাই....
সস্তায় মাল বিক্রি করতে হবে।

অর্থাৎ আপনি যে দামে একটা মাল বিক্রি করছেন কেউ তার চেয়ে আরো সস্তায় সেই মাল বিক্রি করুক৷

কেউ দশ টাকায় একটা ব্যাটারি বিক্রি করলে অন্য কাউকে সেই ব্যাটারি পাঁচ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
আবার কেউ পাঁচ টাকায় বিক্রি করলে অন্য কাউকে সেই ব্যাটারি দুই টাকা কিংবা তিন টাকায় বিক্রি করতে হবে।
অর্থাৎ কম্পিটিশনের কোন সীমা নেই।

আমি বলতে চাইছি এইসব দেখে বা শুনে যদি আমরা ভারতের সমস্ত ফ্যাক্টরি কে রি- স্ট্রাকচার করে দিই তখন হয়তো দেখা যাবে চীন একটা ব্যাটারির দাম পঞ্চাশ পয়সা করে দিল।

আবার তখন যদি আমরা সেই ব্যাটারির দাম পঞ্চাশ পয়সা করে দিই তখন হয়তো দেখা যাবে সেই ব্যাটারির দাম চীন পঁচিশ পয়সা করে দিল৷

তাই আবার বলছি...
কম্পিটিশনের কোন লিমিট নেই তাই এই কম্পিটিশনের চক্করে যেন আমরা ভারতীয়রা আটকে না যাই সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

তাই কম্পিটিশনের রাস্তায় না গিয়ে প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত কো-অপারেশনের রাস্তায় যাওয়া।
অর্থাৎ যেখানে আমার আপনার পরিচিত কোন প্রতিবেশী বা বন্ধু কোন একটা মাল তৈরি করলো যা থেকে তার রোজগার হলো৷

তাই আমি সেই মালটাই নেব যা থেকে আমার সেই প্রতিবেশী বা সে বন্ধুর কিছু রোজগার হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমরা ভারতীয়রা প্রত্যেকে কম্পিটিশনে আটকে গেছি।

আসলে কো-অপারেশন করা লোকজন কম্পিটিশনে আটকে গেলে না তো কম্পিটিশন করতে পারবে আর না তো কো-অপারেশন করতে পারবে।

কারণ আগে যেমনটা বললাম কম্পিটিশন এর কোন লিমিট নেই।
না তো চীনের কোনো লিমিট আছে আর না তো ইউরোপের কোনো লিমিট আছে।

তাই প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে প্রত্যেকে কো-অপারেশনের দুনিয়ায় ফিরে আসুন।

কোনো একটা মাল যা আমাদের শহরে বা দেশে বা গ্রামে তৈরি হলো সেটা প্রথমে কিনুন
এটা হল কো-অপারেশন।

আপনার গ্রামে তৈরি হয় না পাশের কোন গ্রামে তৈরি হয়? সেটা প্রথমে কিনুন এটা হল কো-অপারেশন।

পাশের কোনো গ্রামেও তৈরি হয় না?
কোন জেলায় তৈরি হয়??

তাহলে সেই মাল প্রথমে কিনুন এটা হল কো-অপারেশন।

জেলাতেও তৈরি হয় না কোনো রাজ্যে তৈরি হয় তাহলে সেই মাল প্রথমে কিনুন।

এটা হলো কো-অপারেশন।

আর কো-অপারেশন এর সংজ্ঞা যদি আমরা সবাই ঠিকঠাক ভাবে বুঝে যাই তাহলে আমি মনে করি ভারতকে বদলে ফেলার জন্য এটা যথেষ্ট।

কারণ কো-অপারেশনের দুনিয়ায় যদি আমরা ফিরে আসি তাহলে আমি মনে করি আমরা ভারতের বেকারত্ব, অনাহার, দারিদ্রতা সবকিছুকেই আমরা দূর করতে পারবো।

গান্ধীজী সব সময় বলতেন স্বদেশী জিনিস ব্যবহার করতে।

তাই বারবার সেটা করুন কিন্তু ভুল করেও একবারের জন্য কোনো চাইনিজ প্রোডাক্ট কিনবেন না।

তার জায়গায় ভারতে তৈরি হয় কোন প্রোডাক্ট ই কিনুন।

অনেকে হয়তো বলবে চীনের মাল তো সস্তা তাহলে সেটা ছেড়ে ভারতে তৈরি বেশি দামের জিনিস কিনবো কেন?

তাহলে আমি বলব কো-অপারেশনের ভাবনা নিয়ে জিনিসটা কিনুন, কম্পিটিশনের ভাবনা নিয়ে নয়।

আমি এই প্রোডাক্ট টা কিনলে অন্য একজন ভারতীয় কিছু রোজগার করতে পারবে এই ভাবনা নিয়ে কিনুন, আমি এই প্রোডাক্ট টা কিনলে আমাদের দেশের একজনের অভাব, অনাহার দূর হবে এই ভাবনা নিয়ে কিনুন৷

যবে থেকে আমরা ভারতীয়রা বিদেশি জিনিস বিশেষ করে চীনা জিনিস কিনা শুরু করেছি তবে থেকে ভারতের ৪ লক্ষ ৬২ হাজার ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে এটা বাস্তব৷

আর তাই চীনা জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ না কমলে সংখ্যাটা দিনে দিনে আরও বাড়বে।

ভারতের বেশিরভাগ তেল কারখানা বন্ধ হওয়ার মুখে,  সৌরাষ্ট্রে এ এরকম অনেক তেলের মিল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
যেখানে নারকেল থেকে তেল বার করা হতো৷

সেগুলো কেন বন্ধ ভেবে দেখেছেন?

বন্ধ কারণ আজকাল বেশিরভাগ জায়গা তেই নারকেল তেলের জায়গায় বিদেশী পাম তেল বিক্রি হচ্ছে৷
আর বিক্রি হচ্ছে কারণ আমরা কম্পিটিশন এ পড়ে গেছি৷

যদিও শুধু তেল কল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তা নয়।

দিনের পর দিন অনেক টেক্সটাইল কোম্পানিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

কারণ আজকাল কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর থেকে কাপড় আসছে৷

তাই বেশিরভাগ পাওয়ারলুম আজ বন্ধ৷

আজ সারা দেশে সাড়ে আট লাখেরও বেশি পাওয়ারলুম বন্ধ৷

বিদেশী সিমেন্ট, বিদেশী কাপড়, বিদেশী ওষুধ, বিদেশী আয়রন, বিদেশী কসমেটিকস, বিদেশী জুতো আসছে তাই দেশি জিনিসের কদর নেই।

আর এই ব্যাপারটা আমাদের দেশের এবং প্রতিটি রাজ্যের রাজ্য সরকারকে বুঝতে হবে।

এবার সরকারের কথায় আসি.....

আমাদের দেশের সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের মনে কম্পিটিশন কে বসিয়ে দিয়েছে।
সরকার বলছে কম্পিটিশন করতে৷

কিন্তু একটা কথা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে যে, কম্পিটিশন সবসময় সমানে সমানে হয়।

চীনের কোনো মাল ভারতে এসে বিক্রি হলো যে মালটা চীনে উৎপাদন খরচ হলো নব্বই পয়সা প্রতি ইউনিট হিসেবে বিদ্যুৎ ৷

এছাড়াও  ব্যবসা করার জন্য চীনে অনেক কম পরিমাণ সুদে লোন পাওয়া যায়।

তাছাড়াও ১০০% এক্সপোর্ট সাবসিডি পাওয়া যায়।
আর এই সুবিধা গুলো ভারতে নেই।
তাহলে কিভাবে কম্পিটিশন হতে পারে?

অন্যদিকে চীনের কথা বলতে গেলে বলতে হয় তারা বাইরের অনেক বড় বড় কোম্পানিকে তাদের দেশে ঢুকতে পর্যন্ত দেয়নি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে যেখানে আজ সারা পৃথিবী গুগোল ক্রোম কে ব্যবহার করে সেখানে চীনের মানুষ ইউসি ব্রাউজার কে ব্যবহার করে যা আগের লেখায় বলেছিলাম।

এছারাও গোটা পৃথিবী আজ যেখানে সার্চ করার জন্য গুগোল এর ব্যবহার করে সেখানে ব্যবহার করে বাই টু

সারা দুনিয়া তে যেখানে আজ ১.৭৫ মিলিয়ন থেকে ২ মিলিয়ন লোকজন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে সেখানে চীন তাদের নিজেদের তৈরি Wechat ব্যবহার করে।

হোয়াটসঅ্যাপ কে চিন নিজের দেশে ঢুকতেও দেয়নি।

সারা দুনিয়া তে আজ যেখানে মানুষ মেইল পাঠানোর জন্য জিমেইল এর ব্যবহার করছে সেখানে চীন ব্যবহার করে QQ.com

ফেইসবুকের শীর্ষকর্তা মার্ক জুকারবার্গ হাজার চেষ্টা করেও চীনে ফেসবুক চালু করতে পারেননি।
তারা ভেবেছিল যেহেতু চীনের জনসংখ্যা বেশি তাই চীনে ফেসবুক চালু করে তারা অনেক পয়সা কামিয়ে ফেলবে।
কিন্তু সেই আশাও তাদের পূর্ণ হয়নি কারণ চীন তাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এবং তাই তারা ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে আজ Rainrain.com এর ব্যাবহার করছে৷

এর কারণ একটাই.....

চীনের মানুষ তাদের দেশকে বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসে৷

নিজের দেশ এবং দেশের কর্পোরেট সংস্থা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের দেশের প্রতিটা নাগরিক এক হতে জানে৷
একটা কথা কেউ মানুক চাই না মানুক কথাটা ভীষণ সত্যি আর তা হলো

চীন তার নিজের দেশে বাইরের কাউকে কখনো ঢুকতে পর্যন্ত দেয় না, অথচ আজ তারাই পৃথিবীর প্রতিটি দেশের কোণায় কোণায় ঢুকে বসে আছে।

ছোট থেকে অতি ছোট জিনিস তারা এক্সপোর্ট করছে সেটা ইলেকট্রনিক্স গুডস হোক, মেশিনারি হোক, আইরন স্টিল হোক কিংবা ট্রান্সপোর্ট  ইকুইপমেন্ট হোক কিংবা মেডিকেল ইকুইপমেন্ট কিংবা বাচ্চাদের খেলনা বা ঘর সাজানোর জিনিসপত্র যাই হোক না কেন৷

এমনকি আজ করোনা ভাইরাস  কে পর্যন্ত তারা পৃথিবীর প্রতিটি দেশের কোনায় কোনায় পৌঁছে দিয়েছে যাতে সেই সমস্ত দেশে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট কে বিক্রি করে তাদের ব্যাবসা এবং রোজগার আরও বাড়াতে পারে৷

গন্দা হে পর উনকে লিয়ে ধান্দা হে.....

Comments

Popular posts from this blog

অস্থি বিসর্জন কি এবং কেন

রোগ হরণী মা শীতলা

পবিত্র শালগ্রাম শিলা নিয়ে কিছু কথা